স্নিগ্ধা পাত্র : রাজনীতিতে ধর্মকে ব্যাবহার নতুন কিছুই নয় ৷ গোড়াপত্তন টা বেশ আগে থেকেই ৷ বলা যায় সেই কংগ্রেস এর আমলেই এমন সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছিলো ৷ যার সূত্র ধরেই এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিলো যেখানে ধীরে ধীরে সাম্প্রদায়িকতার বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে ৷ ক্রমশ সেটি ডালপালা মেলে সাম্প্রদায়িক রাজনীতির রূপরেখা তৈরী করতে থাকে ৷
ইতিহাস স্বাক্ষী দেয় , ধর্মীয় জাতিসত্তার ভিত্তিতেই বিভাজন হয়েছিল ভারতবর্ষের ৷ সাল ১৯৪৭ এ দ্বিজাতীতত্বের ভিত্তিতেই ভারত ও পাকিস্তান নামে দু’টি আলাদা রাষ্ট্রের জম্ম হয় ৷ এর আগেও প্রায় একই ভাবে বাংলাকেও বিভাজিত হয় ৷ পূর্ব বাংলা ও আসাম নিয়ে পৃথক সাংবিধানিক কাঠামো গঠিত হয়েছিল। বিভাজনের প্রাক পর্যায়ে কংগ্রেস দল হিন্দু ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায় সমন্বয়ে একক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অনড় ছিলেন ৷ তবে পরে উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা সংঘর্ষ বেঁধে যায় ৷ বিষয়টি বুঝতে পেরেই কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ উভয় দল ভারতবর্ষ বিভাজনে সম্মত হয়।
কংগ্রেস ও মুসলিম নেতৃবৃন্দ এ বিষয়ে ব্রিটিশ সরকারের সাথে আলোচনায় বসে ৷ তখন সিদ্ধান্ত হয় মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হবে এবং হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ জনসংখ্যা অধ্যুষিত অঞ্চল ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে। সে মোতাবেক পাঞ্জাব ও বাংলা অবিভাজিতভাবে পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল; কিন্তু কংগ্রেস দল ভারত বিভাজনে সম্মত হওয়ার পরপরই দাবি তোলে, ভারতের মতো বাংলা ও পাঞ্জাব হিন্দু অধ্যুষিত অঞ্চলের ভিত্তিতে বিভাজিত হতে হবে। এ দু’টি অঞ্চলে যে রক্তক্ষয়ী দাঙ্গা সংগঠিত হয়েছিল তা ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় অনেক ভয়াবহ।
১৯৭৭ সাল থেকে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতার নীতি অনুসৃত হয়ে আসলেও নানা কারনে সংখ্যালঘু মুসলমানদের স্বার্থে টান পড়তে শুরু করে ৷ ধর্ম বিষয়ে দ্বিমুখী নীতি প্রথম কংগ্রেসই গ্রহন করে ৷ যার ফলশ্রতিতে ধীরে ধীরে ভারতে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির প্রসার ঘটতে শুরু করে ৷
একাধিকবার ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল ক্ষমতাসীন কংগ্রেসকে শোচনীয়ভাবে পরাজিত করে ৷ এরপর আসা যাক রামমন্দির ও বাবরী মসজিদ ইস্যুতে ৷ শ্রীরামচন্দ্রের পূন্যভূমিতে রাম মন্দির নির্মান হবে এটাই স্বাভাবিক ৷ একজন হিন্দু হিসেবে আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিষয়টিকে সমর্থন করি ৷ কিন্তু রামমন্দির এবং বাবরী মসজিদ ইস্যুতে যে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে সেটি কোনো ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পক্ষে কাম্য নয় ৷ রাষ্ট্র একদিকে যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠদের সুযোগ দেবে , অপরদিকে সংখ্যালঘুদেরও সমসুযোগের ব্যাবস্থা করবে ৷ সেটি করতে রাষ্ট্র ব্যার্থ ৷ আর এই ব্যার্থতার কারনেই বিভাজনের সৃষ্টি হয় এবং ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ধীরে ধীরে সমাজে প্রবেশ করতে থাকে ৷ যার ফলাফল একদিকে যেমন সংখ্যাগরিষ্ঠদের মধ্যে বিস্তার লাভ করেছে তেমনি সংখ্যালঘূদের মধ্যেও ব্যাপকহারে সাড়া দিয়েছে ৷ মিম (Aimim) তার প্রকৃষ্ট একটি উদাহরণ ৷
এবার আসি বাংলার রাজনীতিতে ৷ সিপিআইএম এর কথা বাদ দিলাম ৷ কারন , সিপিআইএম প্রত্যক্ষভাবে ধর্মভিত্তিক রাজনীতির সাথে জড়িত নয় ৷ রাজ্যে বড় দুইটি রাজনৈতিক দল একদিকে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস অপরদিকে বিজেপি ৷ পশ্চিমবঙ্গে ২০১১ সালে প্রথম ক্ষমতা দখল করে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ তাদের এই ক্ষমতায় আসার ক্ষেত্রে রাজ্যের সংখ্যালঘু মুসলিম ভোট একটি বড় ভূমিকা রেখেছিলো বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন ৷ তৃণমূল নেত্রী মমতা ব্যানার্জিও মুসলিম সম্প্রদায়ের উন্নয়নের জন্য নানা প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ৷ তাই সংখ্যালঘুরা তৃণমূলের উপর ভরসা করেছিলেন ৷
ঠিক তৃণমূলের দেখানো পথেই হাঁটছে বিজেপি ৷ তাদের টার্গেট মতুয়া সম্প্রদায় ৷ পশ্চিমবঙ্গে এই সম্প্রদায়ের একটি বড়সড় ভোটব্যাংক আছে ৷ আর সেটিকেই ঢাল হিসাবে ব্যাবহার করতে চাইছে বিজেপি ৷ তবে যাইহোক না কেনো ভোটের রাজনীতিতে ধর্মের অবস্থানটা বেশ পরিষ্কার হয়ে উঠছে ৷ রাজনীতিতে ধর্ম থাকবে , সাম্প্রদায়িকতা কিংবা অসাম্প্রদায়িকতাও থাকবে ৷ তবে সেই রাজনীতি যেনো সাম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না করে ৷ আমরা বাংলায় সহিংসতা দেখতে চাইনা ৷ আমরা চাইনা দিল্লি কিংবা গুজরাটের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পুনরাবৃত্তি হোক ৷ সব রাজনৈতিক দলের কাছে আমজনতার তরফে এটাই চাওয়া পাওয়া ৷
স্নিগ্ধা পাত্র
এডিটর ইন চীফ, এসপ্লাস নিউজ নেটওয়ার্ক
Leave a Reply