লিয়াকত রাজশাহী ব্যুরোঃ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্বেও রাজশাহীর দূর্গাপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার ও স্থানীয় সাংবাদিকদের ম্যানেজ করে ৩ ফসলি জমিতে চলছে অবৈধ পুকুর খননের হিড়িক। গত কয়েক বছরে অপরিকল্পিত ভাবে অবৈধ পুকুর খননের কারনে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বর্ষা মৌসুমে পানবরজসহ ডুবে গেছে কৃষকের দু’চোখ ভরা স্বপ্নের ফসল।সরেজমিনে দেখাগেছে, দুর্গাপুর উপজেলার মাঠের পানি এখনো শুকাতে পারেনি শেষ হয়নি জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ। তার আগেই সকল রকম প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছেন অবৈধ পুকুর খননকারী ও ভেকুমেশিন দালাল-চক্ররা। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে রাতের আধারে আনা হচ্ছে ভেকু মেশিন। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় লোকচক্ষুর আড়ালেই চলছে ফসলি জমি নির্ধারণ সুযোগ বুঝেই ৩ ফসলি জমিকে রকম পরিবর্তন করে ডোবায় পরিণত করার জন্য প্রস্তুত তারা। ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে অবৈধ পুকুর খননের হিড়িক । উপজেলার ফসলি মাঠজুড়ে অবৈধভাবে পুকুর খননের চিত্রধারনে উঠে এসেছে যেন ঘুমিয়ে আছে স্থানীয় প্রশাসন। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে কোনো কিছুরই তোয়াক্কা না করে বরেন্দ্র কৃষি জমিতে পুকুর খনন করা হচ্ছে। পুকুর কাটার সঙ্গে জড়িতরা দাবি করছেন, প্রশাসন ও স্থানীয় সাংবাদিকদের বিঘা চুক্তির মাসোয়ারা দিয়ে পুকুর খনন করছেন তারা। আরও জানাযায়, উপজেলার নওপাড়া ইউপির, আলীপুর মরা বিলে প্রায় ৩০ বিঘা জমিতে স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতার নেতৃত্বে অবৈধ পুকুর খনন করছেন প্রভাবশালি মাসুদ রানা। আর ওই পুকুর খননের ভেকুমেশিন সরবরাহ করছেন বাগমারার রাসু, আমিন ড্রাইভার নামের দালাল চক্র। সেখানে দিনে রাতে সমান তালে চলছে পুকুর খননের কাজ। ঝালুকা ইউনিয়নের আমগাছি পূর্ববিলে বিএনপি নেতা মামুন সরকারের ছেলে মিনহাজের নেতৃত্বে বরেন্দ্র প্রকল্পের পাইপ উপড়ে দুমড়ে মুচড়ে দেদারছে চালিয়ে যাচ্ছে অবৈধ পুকুর খনন। জানতে চাইলে মিনহাজ বলেন, ইউএনও সাহেবের অনুমতিতে পুকুর খনন করছি। এখানে ভেকুমেশিন সরবরাহ করছে আরেক দালাল চক্র আঃ মান্নন। উপজেলার কিশমত গনকৌড় ইউপির, আড়ইল বিলে প্রভাবশালী আশরাফের নেতৃত্বে প্রায় ৪০ বিঘা ফসলি জমিতে “ধুমধাম” করে দিনেই চলছে অবৈধ পুকুর খননের কাজ। তার পাশেই পুকুর খনন করছেন জুলকার নামের আরেক ব্যক্তি। তেবিলার লক্ষিপুর বিলে রেজাউলের নেতৃত্বে ৩ ফসলি জমিতে চলছে পুকুর খনন। এখানে ভেকু মেশিন সরবরাহ করেছে চিটাগাং থেকে আসা মোশাররফ হোসেন নামে আরেক হোতা। তিনি গত কয়েক বছর ধরে প্রভাবশালী এক নেতার ছত্রছায়ায় ভেকুমেশিনসহ আখের গুঁজিয়েছে ধরমপুর বাজার সংলগ্ন এলাকায় । মাটি বহনের ট্রাক্টর ও ভেকু মেশিন সরবরাহ করছে আরো দুই সক্রিয় দালাল চক্র আলীপুরের শফিকুল ও নারায়ণপুরের মহিদুল ইসলাম। তাদের ভাষ্য কয়মাজমপুর বিলে নাসিমের পুকুর খনন করা জন্য ভেকুমেশিন নিয়ে প্রস্তত তারা। গণমাধ্যম কর্মীরা পুকুর খননের সংবাদ সংগ্রহে মাঠে গেলে নামপ্রকাশ না করা শর্তে সংশ্লিষ্ট অনেকে বলেন, ছবি তুলে, নিউজ করে লাভ নেই। কারণ প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই পুকুর খনন করতে এসেছি। অপরদিকে, পৌরসভার শ্রীপুর গ্রামে ৩ নং ওয়ার্ড কমিশনার জামায়াত ইসলামের দায়িত্ব প্রাপ্ত আজাদের নেতৃত্বে চলছে পুকুর খনন। ভুক্তভোগি এক কৃষক জানান, এর আগে পুকুরখননে বাধা ও অভিযোগ দেওয়ায় অনেককে পুকুর খননকারি চক্রের রোষানলে পড়তে হয়েছে। তিনি বলেন, আমাদের বিলে আবাদি জমি অর্ধেক কমে গেছে। আবার পুকুর খননের কারণে একটু বৃষ্টি হলে ফসল ডুবে যায়। জেলার শীর্ষ কৃষি কর্মকর্তা জানান, অবাধে ফসলি জমিতে পুকুর খননের ফলে ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে কৃষি জমি। পুকুর খনন বন্ধ ও কৃষি জমি রক্ষায় কৃষি বিভাগ, প্রশাসন ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন। দুর্গাপুর জোনের বরেন্দ্র সহকারী প্রকৌশলী আজমল হক জানান, বরেন্দ্র প্রকল্পের পাইপ ভাঙচুর করে অবৈধ পুকুর খনন সম্পুর্ন বেআইনি। সরেজমিনে গিয়ে তদন্ত পুর্বক ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসমত আলী বলেন, অবৈধ পুকুর হচ্ছে শুনেছি। পুকুর খনন বন্ধে ইউএনও, এসিল্যান্ড স্যারের নির্দেশ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নিবো। এব্যাপারে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহসীন মৃধা’র সাথে কথা বলা হলে তিনি বলেন, শুনেছি দুর্গাপুরে প্যাকেজের আওতায় পুকুর খনন হচ্ছে। আপনারা জানেন না ? স্থানীয় সাংবাদিক রবিউল, মোবারক হোসেন, আমিনুল ইসলাম, সাজামাল ও মিজানের সাথে কথা বললেই জানতে পারবেন। সারাদিনই প্রাই মিটিং নিয়ে বেস্ত থাকি এগুলো আমার একার পক্ষে দেখা সম্ভাবনা। গত বছর আমি প্রায় ১ শো টির মতো পুকুর খনন বন্ধ করেছিলাম। তার পরেও ২ শোর বেশি পুকুর খনন হয়েছে। তবে জমির শ্রেনী পরিবর্তন করে ফসলি জমিতে পুকুর খনন সম্পুন্ন বেআইনি। খোঁজ খবর নিয়ে পুকুর খননকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পুকুর খনন বিষয়ে জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল এর মুঠো ফোন ০১৭১৩২০০৫৬৯ নাম্বারে বাবা যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেন নাই।
Leave a Reply